কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে এক ভিক্ষুকের কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে এক ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই ভিক্ষুক উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী পুরানগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। ওই ভিক্ষুকের নাম রাহেলা বেগম (৬০)। ওই ভিক্ষুকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে পুলিশ আজ রোববার তাঁকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠিয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, সরকার ভিক্ষুকদের আবাসন সমস্যা দূর করতে ‘ভূমি আছে, ঘর নাই’ নামে গত বছর একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের অধীনে সুবিধাভোগীরা বিনা পয়সায় ঘর পেয়ে থাকেন। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। ঘর বরাদ্দের জন্য নাম প্রস্তাব এবং মাঠপর্যায়ে কাজ বাস্তবায়নের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা। তবে প্রকল্পের প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে ইউএনও প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে। এখন দ্বিতীয় ধাপের বাস্তবায়ন চলছে। প্রথম ধাপে গজারিয়া ইউনিয়নের জন্য পাঁচটি এবং দ্বিতীয় ধাপে ছয়টি ঘর বরাদ্দ আসে। ছয়টির মধ্যে দুটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় গ্রেপ্তার হওয়া ইউপি সদস্যের ওয়ার্ডে।
ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে বেশ কয়েকজন ভিক্ষুক ওই ইউপি সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। একটি ঘর পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকলেও এলাকায় তিনি প্রচার করেন যে তাঁর পক্ষে বেশ কয়েকটি ঘর পাইয়ে দেওয়া সম্ভব। তখন গোপনে কয়েকজন ভিক্ষুকের কাছ থেকে তিনি কিছু টাকা নেন। ওই ইউপি সদস্য রাহেলার কাছ থেকে নেন ১৮ হাজার টাকা। কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও ঘর না পাওয়ায় রাহেলা অস্থির হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনেন।
এ বিষয়ে ভিক্ষুক রাহেলা অভিযোগ করে বলেন, ‘খরচা ছাড়া ঘর পামু হুইনা গেছিলাম। মেম্বার কিছু খরচা দাবি করে। মনে করছি, তিন লাখ টেহার ঘর পামু, খরচা দিলে দোষ কী। পরে ১৮ হাজার টেহা দিছি। অহন কই ঘর দিতে পারব না।’
ইউএনও লুবনা ফারজানা বলেন, ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মশিউজ্জামান বাদী হয়ে মামলা করেছেন। পুলিশ তাঁকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।
তবে ঘর দেওয়ার কথা বলে ভিক্ষুকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই ইউপি সদস্য। তিনি দাবি করেন, তিনি ভিক্ষুকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তবে ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তিনি তাঁর কাছ থেকে টাকা নেননি। নিয়েছেন ধার হিসেবে। ভিক্ষুকের কাছ থেকে ধার চাওয়া যায় কি না, এমন প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেননি।