ধারাবাহিক
নুসরাত রীপা :
পর্ব-১৩
আজ সকাল থেকেই আবহাওয়াটা থম মেরে আছে। মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি হয়ে আবার থেমেও যাচ্ছে। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। মীরা সিরিয়াসলি পড়াশুনো করছে। টিউশনী দুটোতে যায়। কিন্তু প্রকাশনীর প্রুফ রিডিংটা আপাতত বন্ধ রেখেছে। প্রকাশক জুয়েল ভাই ভালো মানুষ। পড়ার জন্য ছুটি দেন। ছাঁটাই করেন না।
স্নানাহার আর ঘুম বাদে মীরা বই থেকে সরছে না। রেজাল্ট ভালো হতে হবে। যাতে চাকরি সহজে মেলে। বাড়িতে ফোন করবে করবে রোজই ভাবে কিন্তু ফোন করা হয় না। এর মাঝে একদিন বড় চাচী ফোন করেছিল। কেমন আছিস?
ভালো। তুমি?
কিন্তু চাচী উত্তর দেওয়ার আগেই লাইন কেটে গেল। মীরার মোবাইলে ব্যালেন্স ছিল না। কাজেই ওর আর ব্যাক করা হয় নি।
জানলার কাছে এসে আকাশ দেখে মীরা। ঘন ছাইরঙা মেঘের কম্বল আকাশের গায়। মাঝে মাঝে গুড়গুড় করে মেঘের মৃদু গর্জন শোনা যায়।
বৃষ্টি নামবে — নিজের মনেই বিড়বিড় করে মীরা। বিছানায় ফিরে আসে। আর মিনিট দশেক পড়বে। তারপর রান্না করতে যাবে। রান্না মানে খিঁচুড়ি আর আলুভাজা। এটাই অনেক! হাতের নোটস এ চোখ রাখতেই মোবাইল বেজে ওঠে।

আননোন নাম্বার।
মীরা ফোন রিসিভ করে, হ্যালো।
ওপাশ থেকে একটা শান্ত ভদ্র কণ্ঠ ভেসে আসে, কেমন আছেন?
প্রথমে মীরা চিনতে পারে না। অপরিচিত কণ্ঠ তখন নিজের পরিচয় দেয়-আমি অয়ন। সুরেশ্বরগঞ্জ থানার এসপি!
অয়ন নামটা শুনে থতমত খেয়ে যায় মীরা। সেই যে চুরি যাওয়া মোবাইল আনতে থানায় গিয়েছিল, অয়ন কে বাসায় ইনভাইটও করেছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত অয়ন আসেনি আর না আসার কারণ জানতে চেয়ে মীরাও ফোন করেনি ভদ্রলোক কী ভাববেন ভেবে!
মীরা চুপ দেখে ওপাশ থেকে অয়ন আবার বলে, চিনতে পারেন নি?
হুম।পেরেছি।আসলে অনেকদিন পর তো, কেমন আছেন?
যাক। চিনলেন অবশেষে! কী করছিলেন? ব্যস্ত?
পড়ছিলাম।
এই সময়ে?
সামনে পরীক্ষা। না পড়ে আর উপায় কী!! আপনার কথা বলেন। হঠাৎ আমায় মনে করলেন যে!
আপনার কথা মনে পড়ে। কিন্তু ফোন করতে সাহস পাই না। রাগ করেন কী না!
আজ সাহস করে করেই ফেললাম।
হা হা হা। অফিসে কাজ নাই বুঝি? সব চোর ডাকাত কি হাজতে পুরে ফেলেছেন?
মীরার এ প্রশ্নে হো হো করে হেসে ওঠে অয়ন। তারপর বলে, আপনার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে। ঠিক কী যেন আছে আপনার কথায়। আপনাকে আমার বন্ধু ভাবতে ইচ্ছে হয়!
অয়নের কথায় কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলেও মীরা একটু শুকনো হেসে বলে, বেশ তো! আমরা বন্ধু হলাম।
জি না। এভাবে সাদা মুখে চলবে না। আমি আপনার এলাকায় খুশবু হোটেলে আছি। চট করে চলে আসুন। বিরিয়ানি দিয়ে বন্ধুত্ব সেলিব্রেট করি।
আজ না। আমার অনেক পড়া আছে—-
বেশ তো। বাইরে থেকে খেয়ে নিলে রান্নার সময় বেঁচে যাবে। আর বন্ধু হিসেবে না হোক
আজ না। আমার অনেক পড়া আছে—-
বেশ তো। বাইরে থেকে খেয়ে নিলে রান্নার সময় বেঁচে যাবে। আর বন্ধু হিসেবে না হোক একই এলাকার লোক হিসেবেও এটুকু দাবী তো করতেই পারি।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মীরা বেরোতে রাজি হয়।
হোটেলের দোতলায় অয়ন বসে ছিল। ফর্মাল পোশাকে তাকে নায়ক নায়ক লাগছে। জীবনে একা পথ চললেও একা কোন পুরুষের সাথে রেষ্টুরেন্টে বসে কখনো খায়নি মীরা।
অয়নের মুখোমুখি বসে মীরার কেমন একটু রোমান্টিক অনুভূতি হয়। গল্প উপন্যাসে নায়ক-নায়িকাদের এভাবে বসবার কথা বহু পড়েছে।নাটকে-মুভিতে দেখেছে!
এরকম বৃষ্টি মেঁদুর দিনে একজন প্রিয় মানুষ পাশে থাকলে মন্দ হয় না। প্রেম জিনিসটা অপছন্দ করলেও এ মুহূর্তে মীরার মনে হয় প্রেম করাটা আসলে তত খারাপ কিছু নয়।
অয়নকে দেখতে প্রেমে পড়বার মতোই। মীরার মনের ভেতর টুপ টুপ করে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে ভিজতে থাকে!
খাবার এলে দুজনে খেতে থাকে। অয়ন নানান কথা বলছে। মীরা ভাবছে, লোকটা আবার প্রেম ট্রেম করতে চাইছে না কী! এসবে কোনো আগ্রহ নেই ওর। ও চুপচাপ খেয়ে চলে।
আপনি চুপ কেন?
মীরা হেসে বলে, আমি তো কম কথাই বলি।
তাইতো দেখছি। আসলে কী জানেন আপনার কথা বলার স্টাইলটা দারুণ। আর একা যখন বসে থাকেন আপনাকে দেখলে শিশির ভেজা সাদা গোলাপের মত মনে হয়!
মীরা সচকিত হয়। এই বুঝি ভালোবাসি বলবে লোকটা। বুকের ভেতর ধুপ ধুপ করে হৃদযণ্ত্রটা। এটা ঠিক, অয়ন কোন মেয়েকে ভালোবাসি বললে সেই মেয়ে খুবই ভাগ্যবতী। কিন্তু ভালোবাসা তো মীরার জন্য নয়, মীরা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়, আর যদি পায়ও গ্রহণ করতে পারবে না। সম্ভব নয় যে! অথচ ফিরিয়ে দিতেও বড্ড লাগবে ওর!
অয়ন বলে, ভয় পাবেন না। আমি প্রেমিক হতে চাইনি। শুধু বন্ধু হতে চাই। একটা মেয়ের সাথে অলরেডি আমার বাগদান হয়ে গেছে!
জি! একটু থমকে গিয়ে নিজেকে সামলালো মীরা। অস্ফুট কণ্ঠে বলল, অভিনন্দন।
ধন্যবাদ। আমার হবু বৌ ঢাকাতে থাকে। আমি প্রায় প্রতিসপ্তাহে ঢাকায় আসি। আর ঢাকা এলেই কেন যেন আপনার কথা মনে পড়ে। এবার থেকে ঢাকা এলে আপনার সাথেও দেখা করা রুটিন হয়ে গেল! আপনার মতো বন্ধু পেয়ে আমি ধন্য।
আরো একটু সময় পর ওয়েটার বিল নিয়ে এলে মীরা প্রায় জোর করে বিল মিটিয়ে দেয়। অয়ন বলে, পরেরবার আমি! অয়নের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত হাঁটতে থাকে মীরা। খুশবু হোটেল থেকে বাসা হাঁটা পথ দূরত্ব। বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা পড়তে শুরু করেছে।
প্রেম করবে না বলেই তো প্রতিজ্ঞ । অয়নও গ্রেফ বন্ধু হতেই চেয়েছে। তবু বুকের ভেতর এমন চাপা একটা কষ্ট কেন হচ্ছে বুঝতে পারে না মীরা।
পর্ব-১৪
এই পৃথবীটা আসলে বড়ই বিচিত্র। এখানে এমন সব ঘটনা ঘটে মানুষ যা কল্পনাও করতে পারে না। অথচ ঘটে। এই পৃথবীর মানুষগুলোও বিচিত্র। বাইরে থেকে কারো ভেতর ঠাওর করা কঠিন।
সৃষ্টি কর্তা তার ইচ্ছানুযায়ী সমস্ত কিছু নিয়ণ্ত্রণ করেন। আপাতদৃষ্টিতে আমরা যা অকল্যাণকর ভাবি বস্তুত তাতেই হয়ত কল্যাণ! গ্রষ্টাই জানেন তার সৃষ্টির রহস্য।
আরাফের স্কলারশিপটা হয়নি। বড্ড মন খারাপ করে বিছানায় শুয়ে আছে। ওর বাবা ডাক্তার মোসাদ্দেক ছেলেকে বোঝাচ্ছেন।
আরাফ বিরক্ত হয়ে বলল, আব্বু তুমি আমাকে আর বুঝিয়ো না তো। আমি এসব জানি। বলতো, আমি স্কলারশিপ না পাওয়ার মধ্যে “ভালো” টা কোথায়?
আছে বাপ! নিশ্চয়ই আছে—ডাক্তার মোসাদ্দেক আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তখনই ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়া তার দুই মেয়ে কিচিরমিচির করতে করতে ঘর ঢুকলো।
ডাক্তার মোসাদ্দেক এর তিন সন্তান। মেয়ে দুটো টুইন। ইমি আর নিমি। আরাফের নয় বছর পর এদের আগমন। দুটোই ভারি দুষ্টু। দুটোর মধ্যে এত মিল আর সাজসজ্জাও এত মিলিয়ে করে ডাক্তার মোসাদ্দেক নিজেও মেয়েদের আলাদা করে চিনতে পারেন না। প্রায়ই ইমিকে নিমি নয়তো নিমিকে ইমি বলে ফেলেন।
মেয়েরা এতে খুব মজা পায়। বাবাকে বোকা বানাতে তাদের ভালো লাগে।
ইমি নিমি ঘরে প্রবেশ করতেই ডাক্তার মোসাদ্দেক গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, এখন এখানে ঝামেলা করো না তো। নিজেদের কাজে যাও। ভাইয়ার সাথে আমি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছি।
বাবা, আমরাও ভাইয়ার কথা বলতেই এসেছি।
তোমরা আবার কী বলবে?
বলছিলাম কী! ভাইয়া বিদেশে চলে যাবে এটা আমরা একদম চাই না। ভাইয়াকে বরং ভাইয়ার মতো একটা বইপোকা মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। দুজনে সারাদিন বসে বসে বই পড়বে—- বলে নিমি।
আরাফ শুয়ে ছিল। এক লাফে উঠে বসলো, পাকামো হচ্ছে? কান টেনে ছিঁড়ে ফেলব। পাকামোর কী আছে? তোর বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে বুঝিস না– ঘরে প্রবেশ করতে করতে শাকিলা বলল। তারপর স্বামী ডাক্তার মোসাদ্দেকের পাশে দাঁড়িয়ে বলল, সত্যি বলছি আরাফের আব্বু। আরাফের জন্য মেয়ে দেখ।
হ্যাঁ বাবা, মীরাপুর মত মেয়ে। সারাক্ষণ বই পড়বে আর মিষ্টি মিষ্টি করে গল্প করবে। বলল ইমি।
মীরাটা আবার কে? ডাক্তার মোসাদ্দেক অবাক কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন।
শাকিলা বললেন, ঐ যে শাহিনার ভাসুরের মেয়েটা—এই তোমরা সবাই টেবিলে এসো, আমি পানতুয়া করেছি। খাবে। শাকিলার পিছে পিছে সবাই বেরিয়ে যায় কেবল আরাফ শুয়ে থাকে। বিয়ে করার কথা তেমনভাবে ভাবাই হয় নি কোনদিন।
মীরার মতো মেয়ে! আরাফের জোরাজুরিতে মীরা দুই তিনবার এ বাসায় এসেছে। প্রথম দিনের অভদ্র আচরণের কাফফারা দিতে আরাফ কোনও ঘাটতি রাখে নি। আর ব্যাপারটা মাকে ও বলেছিল। মীরা এলে তাই আপ্যায়নে ত্রুটি হয়নি। যদিও প্রতিবার আরাফ জোর করেই মীরাকে ডেকে এনেছে।
মীরা এসেছে বটে কিন্তু খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে একদম অনাগ্রাহী আর সব ব্যাপারেই খানিকটা নির্লিপ্ত টাইপ। ওর নজর কেবল বইয়ের দিকে। প্রথম দুবার ব্যাগ ভরে বই নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ বার আর বই নেয়নি। মনে হয় বই ফিরিয়ে দিতে আসতে হয় বলেই আর বই নেয়নি। হয়ত কারো বাসায় বার বার আসতে ওর ভালো লাগে না।
মীরার মত নিরব চুপচাপ বউ হলে অবশ্য আরাফের আপত্তি নেই।
আরাফ মনে মনে মীরার কথা ভাবে। মীরার মত কেন? মীরাকে কি বিয়ে করা যায় না? মা আবার বিয়ে প্রসঙ্গ তুললে কিংবা পছন্দ জানতে চাইলে মীরার কথা বলবে মা কে – ভাবতে ভাবতে আরাফ খাবার ঘরের দরজার কাছাকাছি এসে থমকে যায়। মা বলছে, যত ভালো মেয়েই হোক মীরাকে বাড়ীর বউ করতে যাব কোন দুঃখে। ওর বাপ মা নাই, বংশ পরিচয় নাই, কাদের ঘরে কীভাবে জন্মেছে কে জানে? ও হবে আমার একমাত্র ছেলের বউ?
পর্ব-১৫
জেবার মনটা আজ ভীষণ খারাপ। অয়নের সাথে ঝগড়া হয়েছে। কথা বলতে বলতে অয়নের মোবাইটা স্ক্রল করছিল। হঠাৎ মীরা নামটা চোখে পড়লো।পাশে সর্বশেষ কথা বলার তারিখ ও সময়সীমা দেখা যাচ্ছে!
জেবা অয়নকে জিজ্ঞেস করলো, মীরা কে?
অয়ন স্বাভাবিকভাবেই মীরার সাথে তার পরিচয়ের গল্পটা বলে। শুনে জেবা ভ্রু কোঁচকায়, ওকে তো মোবাইল ফিরিয়ে দিয়েছো। তাহলে আবার কী কথা! আর ওর নাম্বরটাইবা সেভ করে রাখার কী আছে?
বাহ্। পরিচয় হলো কথা হলো, আর আমরা একই এলাকার মানুষ। নম্বর সেভ রাখলে ক্ষতি কি?
এলাকার সবার নম্বর তো রাখোনি। একটা ইয়াং মেয়ের নাম্বার রাখতে হবে কেন?
অয়ন বুঝতে পারে একটা মেয়ে যত সহজ সরল আর বয়স কম হোক ভালোবাসার ক্ষেত্রে সে শতভাগ স্বার্থপর! কিন্তু মীরার সাথে তো অয়নের প্রেম না। ভার্সিটি থেকে পড়ে আসা একটা ছেলের মেয়ে বন্ধু থাকতে পারে না?
কিন্তু এখানেও জেবার যুক্তির কাছে হেরে যায় অয়ন। মীরা তো তোমার ভার্সিটির বন্ধু না।
জেবার এধরণের আচরণে অয়ন মনে মনে একটু বিরক্ত হলেও মুখে কিছু না বলে জেবাকে দেখিয়ে মীরার নাম্বারটা ডিলিট করে দেয়।
জেবা সেটা দেখে একটু ¤¬ান হাসে। কিন্তু সুন্দরী বলে মলিনতা টা চোখ এড়িয়ে যায় অয়নের। বরং ওর মনে হয় আলো জ্বলে উঠলো অন্ধকার ফুঁড়ে! এমন আলোতেই পতঙ্গ আগুনে ঝাঁপ দেয়। অয়ন তো মানুষ মাত্র। রূপসী জেবার হাসিতে সে ভেসে যায় মুগ্ধতার গ্রোতে।
কিন্তু জেবা আজ আর বসতে চাইল না। ফ্রাইড প্রণ আর ফিস কেক পড়ে রইল কাপ ভর্তি ঠান্ডা কফির পাশে।
মীরার সাথে অয়নের ফোনে কথা হয়েছে এটা অয়ন স্বীকার করার পরই আজকের মুডটা বদলে গেছে, দুজনেরই। অয়ন জেবার এত রাগ করার কারণটা বুঝতে পারে না। মীরার সাথে কথা বলায় দোষটা কোথায় সে বোঝে না। আর কথা বলেছে এটা অস্বীকার করবেই বা কেন? মীরার সাথে তো তার কোন বিশেষ সম্পর্ক নাই।কিন্তু জেবা কী না কী ভেবে রেগে গেছে।অয়ন একটু বোঝাতে চেয়েছিল কিন্তু জেবা বলেছে, বাদ দাও। বাসায় যাব। ভাল্লাগছে না। অয়ন গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেছে কিন্তু অন্যদিনের মতো জেবা আজ নিজের ঘরে ঢুকে ভিডিও কল দেয় নি। ফোন সুইচড অফ করে রেখেছে।
বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে ফোন বন্ধ পেয়ে অয়ন মোটরবাইক নিয়ে ঢাকার রাস্তায় কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়ায় অনিশ্চিত ভাবে। তারপর নিউমার্কেটে এসে ঢোকে। ঢাকায় অসংখ্য শপিং মল এখন কিন্তু তা স্বত্ত্বেও নিউমার্কেটের আবেদন ফুরিয়ে যায় নি। এখানে সব কিছু পাওয়া যায়। কাপড় জামা থেকে ঘর গেরস্থালি, বই-পত্র, আঁকার সরঞ্জাম, ইলেকট্রনিক্স পণ্য এমনকি চাইলে নিড়ানী গজালিও হয়তো পাওয়া যায়! ছোট বেলা ফুপুর বাসায় বেড়াতে এলে মা নিউমার্কেট থেকে ঘরের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি কিনে নিয়ে যেতেন। মা,বাবার সাথে তখন অয়নও নিউমার্কেটে আসতো।
মোটর বাইকটা পার্কিং এ রেখে অয়ন নিউমার্কেটে এলোমেলো ঘুরে বেড়াতে থাকে। আর তখনই সহপাঠী মনজুর আার শিলার সাথে দেখা। ক্যাম্পাসে ওরা সফল জুটি। অয়নকে দেখে ওরাও উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে।
চশমার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতে মাগরেবের আজান শোনা যায়। মনজুর নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে শিলা হঠাৎ বলে, অয়ন তোর ফোন নম্বরটা দে তো। তাড়াতাড়ি। মনজুরকে বলিসনা আমি নম্বর নিয়েছি। অয়ন অবাক হয়ে নাম্বার দিয়ে বলে, কেন রে? শিলা মৃদু স্বরে বলে, পরে বলবো।
অয়ন আর শিলা এরপর মনজুরের আসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে, চুপচাপ।
কোন কথা খুঁজে পায় না দুজন।