দূর্ণীতি দমন কমিশন কর্তক অভিযুক্ত ও করোনা রিপোর্ট জালিয়াতি-প্রতারণায় আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতাল অন্যতম হোতার সহযোগী ডাঃ সাইফুল ইসলাম এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর
নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইফস্টাইল, হেলথ এডুকেশন এন্ড প্রমোশন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো-এর লাইন ডাইরেক্টর হিসাবে দায়িত্বে পালন করছেন জালিয়াতি-প্রতারণায় আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতাল এর মালিক মোঃ সাহেদ কেলেংকারীর অন্যতম সহযোগী ও দূর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক অভিযুক্ত উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মানছে না কোন নিয়ম ও বিধি-বিধান এমনকি মানছেন না মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একনেকের সিদ্ধান্ত। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন ৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচীর (ঐচঝচ) মুল চৎড়লবপঃ ওসঢ়ষবসবহঃধঃরড়হ চষধহ(চওচ)-তে এমন কি অনুমোদিত অপারেশনাল প্লানে কোন চিকিৎসক কর্মকর্তা লাইন ডাইরেক্টর, লাইফস্টাইল, হেলথ এডুকেশন প্রমোশনের হিসাবে পদায়নের বিধান নাই। তথাপি স্বাস্থ্য সেব বিভাগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভার সিদ্ধান্তের বাইরে পূর্বতন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মো: আবুল কালাম আজাদ এর পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে ২(দুই) বছর যাবৎ চিকিৎসক কর্মকর্তাকে লাইন ডাইরেক্টর হিসাবে পদায়ন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বিগত ৩/৪ মাস পূর্বে দূর্নীতিবাজ ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম-কে লাইনডাইরেক্টর হিসাবে পদায়ন করা হয়। ডাঃ সাইফুল ইসলাম ছিলেন পূর্বতন অধ্যাপক ডাঃ মো: আবুল কালাম আজাদ এর সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) অর্থাৎ মহাপরিচালকের পিএস। তিনি ছিলেন পূর্বতন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মো: আবুল কালাম আজাদের আস্থাভাজন ও গোপনীয় কাজের সাথী। যে কারনে তাঁকে উপ-পরিচালক হিসাবে পদোন্নতি দেয়া হলেও কোটি টাকার মালিক হবার লোভে নিচের পদে অধ্যাপক ডাঃ মো: আবুল কালাম আজাদের সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) বা পিএস হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক ডাঃ মো: আবুল কালাম আজাদ দূর্ণীতির কথা সকলেরই জানা আছে। সাহেদ কেলেংকারীসহ অন্যান্য বিষয়ে দূর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় সরকার আবুল কালাম আজাদের চুক্তি ভিত্তিক চাকুরী বাতিল করেন। অথচ যে লোকটি তাঁর পিএস বা একান্ত গোপনীয় কাজের সাক্ষী এবং জালিয়াতি-প্রতারণায় আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতাল ও এর মালিক মোঃ সাহেদ কেলেংকারীর অন্যতম সহযোগী ও হোতা এবং দূর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক অভিযুক্ত তাঁকে মন্ত্রনালয় পুর¯ৃ‹ত করে একনেকের সিদ্ধান্তের পরিপন্থি লাইন ডাইরেক্টর, লাইফস্টাইল, হেলথ এডুকেশন এন্ড প্রমোশন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হিসাবে পদায়ন করেন। এই সুযোগে স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর দূর্নীতিবাজ ও সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী কর্মকর্তাগণ মহানান্দে লুটতরাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর নিজস্ব সুনাম বিক্রি করে টাকা রোজগারের মহোৎসবে মেতে উঠেছেন। প্রমাণ হিসাবে স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর ট্রেনিং এন্ড ফিল্ড অফিসার আসিফ মাহমুদ এর নাম সবার আগে চলে আসে। তিনি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার বিএনপির প্রাক্তন মন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেনের নিকটজন এবং মোশারফ হোসেনই তাকে চাকুরী দান করেন। স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর অধীন মাঠ পর্যায়ের ট্রেনিং তিনি বাস্তবায়ন করেন। দেশের সকল জেলা ও উপজেলার সংশ্লিষ্ট ট্রেনিং কাজের কর্মকর্তাদের সহিত যোগাযোগ করে জানা যায় যে, ট্রেনিং খাতের ব্যয়ের এক তৃতীয় ভাগ টাকা তিনি জেলা/উজেলার কর্মকর্তাদের নিকট হতে আদায় করে থাকেন। তিনি অবশ্য এ বিষয়ে জানান যে, আমি কেবলমাত্র লাইন ডাইরেক্টরের হুকুম বাস্তবায়ন করি। এ বিষয়ে দাউদকান্দি উপজেলা হতে জানা যায় যে, আসিফ মাহমুদ দূর্নীতির মাধ্যমে আয়ের টাকা বিএনপির প্রাক্তন মন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেনের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করে থাকেন। আসিফ মাহমুদ-কে এই কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেন একই দপ্তরের মিডিয়া উন্নয় কর্মকর্তা মাউদুদুল হাসান। কেননা তিনি আসিফ মাহমুদ এর জাতিভাই। তিনিও একসময় ফরিদপুরের বিএনপির দাপটে মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের এপিএস ছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরাধীন স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো-১৯৫৮ইং হতে জনগনকে সচেতন করার কাজ করে যাচ্ছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের জনগনকে রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত বার্তা প্রচার করে রোগ প্রতিরোধের সচেতন করার দায়িত্ব পালন করে থাকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উক্ত প্রতিষ্ঠানটিই কেবল মাত্র নন-মেডিকেল ও নন-ক্যাডার কর্মকতাদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠানের আওতায় বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্কেলের প্রায় ৩০০টি পদ বিদ্যমান আছে এবং উক্ত পদে কর্মরত থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগন যেহেতু নন-মেডিকেল পার্সন সেহেতু সকল পর্যায়ে মেডিকেল পার্সনদের সহিত থেকে দায়িত্ব পালন করা কষ্টসাধ্য। তথাপি একনেকের সিদ্ধান্তে নন-মেডিকেল কর্মকর্তাকে লাইন ডাইরেক্টর হিসাবে পদায়নের বিধান থাকলেও চিকিৎসক কর্মকর্তা ডাঃ সাইফুল ইসলাম, উপ-পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে উক্ত পদে পদায়ন করায় সকলের পক্ষে চাকুরী করা অসম্ভব। এ বিষয়ে জানানো যাচ্ছে যে, যেহেতু স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর কর্মকর্তাগন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা সেহেতু লাইফস্টাইল, হেলথ এডুকেশন প্রমোশনের অনুমোদিত অপারেশনাল প্লানে লাইন ডাইরেক্টর, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার পদে উক্ত নন-ক্যাডার কর্মকর্তাগনই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার বিধান রাখা হয়েছে। কোন চিকিৎসক কর্মকর্তাদেরকে ওএসডিকরে প্রোগ্রামের কোন পদে পদায়নের সংস্থান নাই। তথাপি বেআইনি ভাবে চিকিৎসক কর্মকর্তাকে পদায়নকরা হয়।

সাহেদ কেলেংকারীর হোতা ও দূর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক অভিযুক্ত থাকা ডাঃ সাইফুল ইসলাম একজন সুচতুর ও চালাক কর্মকর্তা। তিনি বর্তমান মহাপরিচালকের সুপারিশ নিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিপ্রায় নিয়ে লাইন ডাইরেক্টর, লাইফস্টাইল, হেলথ এডুকেশন এন্ড প্রমোশনের দায়িত্ব লাভ করেন। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন লাইফস্টাইল, হেলথ এডুকেশন এন্ড প্রমোশনের ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট ছিল প্রায় ৭০.০০ কোটি টাকা। জুন/২০২১ইং পর্যন্ত এ প্রোগ্রামে খরচ হয় প্রায় ৫০.০০ কোটি টাকা। উক্ত ৫০.০০ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ১২.০০ কোটি টাকা কোভিড-১৯ চলাকালীন সময় লকডাউন অবস্থায় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় এডভোকেসি/সেমিানার ও প্রশিক্ষণের নামে ভুয়া বিল/ভাউচার করে উত্তোলন করেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো হতে কর্মকর্তারা জেলায় ওউপ-জেলায় গিয়ে সম্মানীসহ যাতায়াত ভাতা নেয়ার বিধান থাকলেও কোন কর্মকর্তাই কোন জেলায় বা উপজেলায় যায়নি। অথচ না গিয়ে প্রায় ১.০০ কোটি টাকা সম্মানী ও যাতায়াত ভাতা উত্তোলন করে নেন। শুধু তাই নয় বিভিন্ন বেসরকারী কনসালটিং ফার্মের মাধ্যমে করোনাকালীন লকডাউনের সময় প্রচার প্রচারণার নামে ২০.০০ কোটি টাকা ভুয়া বিল করে তুলে নেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সকলেই জানেন যে, লাইন ডাইরেক্টর ডাঃ সাইফুল ২৫% কমিশন নিয়ে ২০.০০ কোটি টাকার চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। প্রতিটি ২.০০ কোটি টাকা থেকে ৪.০০ কোটি টাকার মোট ৯টি প্যাকেজের প্রচার-প্রচারণার কাজ বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক ৩/৪ মাস সময় নির্ধারণ করে প্রকিউরমেন্ট প্লান অনুমোদন করেন। অথচ ২০/২৫ দিনের সময় দিয়ে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এ বিষয়ে দেশের বিভিন্ন স্ব-নামধন্য কনসালটিং ফার্মসমূহ দূর্নীতি দমন কমিশন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অভিযোগ করলে অভিযোগসমূহ এনএসআই কর্তৃক যাচাই-বাছাই চালিয়ে যাচ্ছেন। সুচতুর লাইন ডাইরেক্টর ডাঃ মোঃ সাইফুল এনএসআইকে ম্যানেজ করার জন্য প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জানা যায় আসিফ মাহমুদও ইতিমধ্যে এডভোকেসি/সেমিানার ও প্রশিক্ষণের নামে ভুয়া বিল/ভাউচারের উত্তোলন এর বিষয়ে এনএসআইকে তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট না দেয়ার জন্য সার্বক্ষনিকভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ডাঃ সাইফুল ইসলাম চাকুরী জীবনে কোনদিন টাকা পয়সা ছাড়া কোন কাজ করেন নাই। তিনি ঢাকার সিভিল সার্জন অফিসে প্রায় ২০ বছর মেডিকেল অফিসার হিসাবে চাকুরী করেন। সিভিল সার্জন অফিসে তিনি ঢাকা জেলার বেসরকারী ক্লিনিক ও প্যাথলজির লাইসেন্স প্রদানের দায়িত্ব পালন করতেন। ঢাকা জেলায় যত ক্লিনিক ও প্যাথোলজির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে তার সকল লাইসেন্স তিনি করিয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। যখন তিনি অধ্যাপক ডাঃ মো: আবুল কালাম আজাদ এর সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) অর্থাৎ মহাপরিচালকের পিএস ছিলেন তখন কোন নথিই ডাঃ সাইফুলকে পয়সা না দিলে স্বাক্ষর হতো না। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মুখে মুখে গুঞ্জন রয়েছে। যার প্রমান তিনি এবারও রেখেছেন। কেননা লাইফস্টাইল, হেলথ এডুকেশন এন্ড প্রমোশন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর ২০২০-২০২১ অর্থবছরের যন্ত্রপাতি কেনাকাটার জন্য দরদাতাদের নিকট হতে চাহিদা মোতাবেক কমিশন না পাওয়ায় বরাদ্দকৃত ১২.০০ কোটি টাকার মালামাল না কিনে সকল টাকা ফেরৎ দিয়ে দেন। তিনি বলেন সরকারী মালামাল কিনে আমার লাভ কি ? আমার লাভ হলো মালামাল কিনে কমিশন নেয়া । যেহেতু দরদাতাগণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দরপত্রে অংশগ্রহন করেন সেহেতু ডাঃ সাইফুল ইসলামকে তার দাবীকৃত টাকা দেয়া সম্ভব নয় বিধায় সকল দরপত্র বাতিল করে দেন।
সাহেদ কেলেংকারীর হোতা ও দূর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক অভিযুক্ত থাকা ডাঃ সাইফুল ইসলাম জোর গলায় বলেন ‘আমার বিরুদ্ধে লিখে কোন লাভ নাই। আমাকে কেউ সরাতে পারবে না। চাকরী জীবনটা ঢাকায় শেষ করতে যাচ্ছি।’ এ ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবচেয়ে ক্ষমতাবান কর্মকর্তা অতিরিক্ত মহাপরিচালক (উন্নয়ন) আমার বান্ধবী। বর্তমান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (উন্নয়ন) এর সুপারিশের ভিত্তিতে লাইফস্টাইল, হেলথ এডুকেশন এন্ড প্রমোশন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর লাইন ডাইরেক্টর বানিয়েছেন। আমার বিরোদ্ধে লিখে কারো কিছু করার নাই। এনএসআই কর্তৃপক্ষও আমাকে সরানোর কোন ক্ষমতা রাখেন না। আমি কর্তৃপক্ষের আস্থাভাজন ও সকলকেই ম্যানেজ করে চাকুরী করে যাচ্ছি এবং চাকুরী করে যাবো।’ আসলেও ঘটনটি সঠিক, নতুবা দূর্নীতির প্রমান পাওয়ায় সরকার আবুল কালাম আজাদের চুক্তিভিত্তিক চাকুরী বাতিল করেন কিন্তু তার একান্ত সহযোগীকে পদোন্নতি দিয়ে লাইন ডাইরেক্টর হিসাবে পদায়ন হয়। অধিকন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পিএস ও এপিএসকে বদলী হয় অথচ ডাঃ সাইফুল পদোন্নতি পায়। এ যেন দেখেও কেউ দেখার নাই।