সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে গাজীপুর জেলার টঙ্গী পশ্চিম থানার দেওরা এলাকাটি। টঙ্গী পশ্চিম থানার দেওরা এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী (ক্রসফায়ারে নিহত) প্রিন্স খানের পুত্র সন্ত্রাসী মেহেদী খানের নেতৃত্বে গঠিত সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে এলাকাবাসী অতীষ্ট হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মেহেদীর সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদকব্যবসাসহ সকল অপরাধকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
২০১৩ সালে ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয় গাজীপুর সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ‘সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ’ এলাকা টঙ্গীর দেওরা এলাকা। সন্ত্রাসী মেহেদী খানের বাবা প্রিন্স খানও ছিলেন এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী। প্রায় ১৪ বছর আগে র্যাবের সাথে ক্রসফায়ারে নিহত হন প্রিন্স খান। বাবার মৃত্যুর পর একমাত্র পুত্র মেহেদী তার সা¤্রাজ্য দখল করে একটি বাহিনী গঠন করে এলাকায় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির রামরাজত্ব কায়েম করেছে। ২টি হত্যা মামলাসহ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদকব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগে অনেকগুলো মামলা ছিল। প্রাণনাশের ভয়ে কেউ সাক্ষী দিতে না যাওয়ায় মামলাগুলো থেকে রেহাই পেয়েছে মেহেদী। ২টি হত্যা মামলা থেকে রেহাই পেয়েছে বাদীর সাথে আপোস করে। বর্তমানে কাভার্ড ভ্যানে ডাকাতির একটি মামলা বিচারাধীন আছে। মামলাগুলো থেকে রেহাই পাওয়ায় আরো এখন আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে মেহেদী।
টঙ্গীর দেওড়া, কলেজগেট, সফিউদ্দিন রোড, মুক্তারবাড়ি রোড এলাকায় আছে মেহেদী বাহিনীর দাপট। টঙ্গী পশ্চিম থানায় হওয়া একাধিক মামলার আসামি তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। তাঁর দলে আছে বেশ কিছু কিশোর ও উঠতি বয়সের তরুণ। বিভিন্ন সময় মারামারি বা আধিপত্য বিস্তারে এসব কিশোর-তরুণকে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর বাইরে টঙ্গীর খাঁ পাড়া, দত্তপাড়াসহ পুরো আউচপাড়া এলাকায় রয়েছে তার দাপট। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও তৎপরতা জরুরি। সিটি করপোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ এলাকা টঙ্গী। এখানে দখলবাজি, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মে কিশোর বা উঠতি বয়সী তরুণদের উৎপাতের অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মেহেদী খানের বাহিনীর অধিকাংশই সদস্যই দরিদ্র পরিবারের। কারও বাবা রিকশা চালান, কারও বাবা চা বিক্রি করেন, আবার কারও মা-বাবা গৃহকর্মীর কাজ করেন। কিশোরদের কেউ স্কুল থেকে ঝরে পড়া, কেউ বা স্কুলেই যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, অপরাধের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ কিশোরই বিভিন্ন বস্তির। তারা বেকার থাকায় যে কেউ এসব কিশোরকে দিয়ে সহজেই অপরাধ করাতে পারছে। বৈধ কোন ব্যবসা-বাণিজ্য নেই মেহেদীর, মা কোহিনুর বেগম পৈত্রিকসুত্রে কিছু জমি পেয়েছেন, সেখানে টিসশেড ঘর উঠিয়ে নিজেরা বাস করেন কিন্তু চলেন প্রিমিও গাড়িতে। তার গাড়ি নম্বর-ঢাকা মেট্রো-গ. ৭০৬৯। মা কোহিনুর একজন চরিত্রহীন মহিলা হিসাবে সকলের নিকট পরিচিত। স্বামী প্রিন্স খান ক্রসফায়ারে নিহত হবার পর ১৪/১৫ টি স্বামী বদল করেছেন। প্রিন্স খানের বাবা মোহর খান ১০/১২ টি বিয়ে করেছিলেন, তিনি ইন্তেকাল করেছেন কিন্তু তার ৪ স্ত্রী এখন জীবিত। বৈধ কোন রোজগার না থাকলে মা কোহিনুর ও ছেলে মেহেদী চলেন রাজার হালে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ছেলে সন্ত্রাসী ও মাদকব্যবসায়ী আর মা কোহিনুর দেহ ব্যবসায়ী। উত্তরা এলাকায় গোপনে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মেয়ে রেখে দেহ ব্যবসা চালায়। কোহিনুরের সেক্স সেন্টারে মদ, বিয়ার ইয়াবাসহ সব ধরণের মাদকও বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। এলাকাবাসী বলেন ‘বৈধ কোন আয় নেই, অথচ বিলাসী জীবনযাপন করেন কিভাবে?’ এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই বেরিয়ে আসবে চাঞ্চল্যকর তথ্য।