বিভিন্ন গ্রাহকের একাউন্ট থেকে গোপনে নিজের একাউন্টে টাকা স্থানান্তর করে আত্মসাত করার বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে প্রমানিত হলেও এখনও বহালতবিয়তেই আছে জালিয়াত চক্রের মূল নায়ক জাবেদ রহমান চৌধুরী। হেড অফিসের বড় কর্তাদেরকে বিষয়টি জানানোর পর তারাও ভাগ-বাটোয়ারায় লিপ্ত হয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি জানাজানি হবার পর ‘ভুল পোষ্টিং’ উল্লেখ করে গ্রাহকের একাউন্টে কিছু টাকা জমা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেবার পাঁয়তারা চলছে বলে জানা গেছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক :
একাধিক গ্রাহকের একাউন্ট থেকে নিজের এ্কাউন্টে মোটা অংকের টাকা ট্রান্সফার করার পরও বহালতবিয়তেই রয়েছেন প্রধান জালিয়াত জাবেদ রহমান চৌধুরী ও তাকে সহায়তাকারী সাবেক ম্যানেজার মো. সেলিম মিয়া ও বর্তমান ম্যানেজার আব্দুস শুকুর।
দীর্ঘ অনুসন্ধানে রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকে একটি জালিয়াত সি-িকেটের সন্ধান পাওয়া গেছে। সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, প্রধান কার্যালয়, মতিঝিল, ঢাকা-এর জনসংযোগ বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, মোঃ গোলাম হাসানের নেতৃত্বে পরিচালিত এই জালিয়াত সি-িকেটের সাথে যুক্ত রয়েছে এ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার পারভেজ হাসান তরফদার, কেরানীগঞ্জস্থ রসুল পুর শাখার ম্যানেজার শুকুর আলী, সাবেক ম্যানেজার (বর্তমানে কলাতিয়া বাজার শাখায় কর্মরত) মোহাম্মদ সেলিম মিয়া ও অফিসার জাবেদ রহমান চৌধুরী এবং এদের সাথে যুক্ত রয়েছে কর্মচারী ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা। প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শে জাবেদ রহমান চৌধুরী ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকের (যাদের একাউন্টে যথেষ্ট টাকা আছে কিন্তু একাউন্টটি ডরমেন্ট হয়ে আছে অথবা দীর্ঘদিন যাবত একাউন্টে কোন লেনদেন হচ্ছে না) একাউন্ট থেকে নিজের একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে এবং জালিয়াত চক্রের সদস্যরা ভাগ-বন্টন করে নেয় (জাবেদ রহমানের একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার সংক্রান্ত কিছু স্টেটমেন্ট রাজপথ বিচিত্রা’র হাতে রয়েছে।)
রাজপথ বিচিত্রার অনুসন্ধানে দেখা যায়, সোনালী ব্যাংক রসুলপুর শাখার অফিসার জাবেদ রহমান চৌধুরী ২০১৭ ইং সনের ১০ আগস্ট তারিখে একটি সেভিংস ব্যাংক একাউন্ট (স্টাফ) ওপেন করেন যার নং-৫৯১০৫০১০২৫০৩৬। পরে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গ্রাহকের একাউন্ট থেকে বিপূল পরিমান টাকা নিজের একাউন্টে ট্রান্সফার করে নিয়ে আত্মসাৎ করেন। একাউন্টগুলোর মধ্যে ৫৯১০৮৮৬৬১৬৩, ৫৯১০৮৮৬৬১৬৪, ৫৯১০৮৮৬৬১৬৫ ও ৫৯১০৮৮৬৬১৬৬ উল্লেখযোগ্য। জাবেদ রহমানের একাউন্টের হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায় টাকা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে একাধিক কর্মকর্তার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। এরমধ্যে আকতারুল কবির নামের একজন কর্মকর্তা অবসরেও চলে গেছেন। এই জালিয়াতি ও আত্মসাতের সাথে সাবেক ম্যানেজার মো. সেলিম মিয়া সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। তাছাড়া যাদের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়েছে তারাও এই চুরির ভাগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছে একটি সুত্র। জনৈক গ্রাহক নিজের একাউন্ট থেকে টাকা তুলতে এলে জালিয়াতি ও চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে যায়। তখন গ্রাহকের একাউন্টে টাকা জমা দিয়ে ও গ্রাহকের কাছে ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়। ম্যানেজার সেলিম বিপদ আঁচ করতে পেরে হেড অফিসে তদবীর করে কলাতিয়া শাখায় বদলী হয়ে গেছেন। এ বিষয়ে সাবেক ম্যানেজার সেলিম মিয়ার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘ঘটনা সত্য তবে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেবার কথা ছিল।’ বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি কেন- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন, পরে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তথ্য অধিকার আইনে তার বক্তব্য চেয়ে আবেদন করেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি। সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে আরো জানা যায় যে, বর্তমান ম্যানেজার আব্দুস শুক্কুর বিষয়টি জানতে পেরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর উদ্যোগ নেন কিন্তু পরে চুরির ভাগ পেয়ে বিষয়টি চেপে যান। এ বিষয়ে শুক্কুরের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘এসব বিষয়ে ফোনে আলোচনা ঠিক হবে না, আসুন, সম্পর্ক করি, চায়ের দাওয়াত রইল।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানার রাজপথ বিচিত্রা’র এ প্রতিবেদক সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, প্রধান কার্যালয়, মতিঝিল, ঢাকা-এর জনসংযোগ বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, মোঃ গোলাম হাসানের দপ্তরে গিয়ে দুর্নীতির বিষয়টি বর্ণনা করে তার বক্তব্য দিতে অনুরোধ জানালে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, গোলাম হাসান, এ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার পারভেজ হাসান তরফদার এই প্রতিবেদককে লাঞ্ছিত করেন। এই তিনজন মিলে বর্তমানে চুরির বিষয়টি ধামাচাপা দেবার দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগটি ধামাচাপা দেবার সকল প্রক্রিয়া খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে বলে জানা গেছে।