নিজস্ব প্রতিবেদক,বগুড়া :
বগুড়ার ধুনটে নিজের নবজাতক শিশুকে হত্যার পর টয়লেটের ট্যাংকিতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে মা আদুরী খাতুনকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আদুরী খাতুন তার নিজের সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করার অপরাধে কেছেম (৪৫) নামের এক কবিরাজকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার ধুনট থানা হাজত থেকে বগুড়ার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে কবিরাজকে। এর আগে গত শনিবার বিকেলে আদুরী খাতুনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে নিজের সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন। জানা গেছে, পার ধুনট গ্রামের হোসেন প্রামানিকের ছেলে অসিমের সঙ্গে ৭ বছর আগে চান্দারপাড়া গ্রামের আয়তুল্লাহ্ মন্ডলের মেয়ে আদুরীর বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ৫ বছর বয়সী এক ছেলের পর এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় আদুরী। কিন্তু শিশুটির ফুসফুস ফুটো রয়েছে বলে ডাক্তার জানায়। এরপর গত ১৬ জুলাই আদুরী তার এক মাস আট দিন বয়সী শিশুকে চিকিৎসা না করিয়ে বাবার বাড়ি চান্দারপাড়া গ্রামে চলে আসে এবং বাচ্চাটিকে কবিরাজি চিকিৎসার জন্য পাশের কবিরাজ কেছেমের শরণাপন্ন হয়। গত ১৭ জুলাই সকাল ৯টার দিকে শিশুটির বাবা অসীম, নানী চম্পা খাতুন ও মা আদুরী খাতুন কবিরাজের বাড়িতে গেলে কেছেম কবিরাজ তাদেরকে কলাপড়া, ফিটকারী পানি পড়া, তেলপড়াসহ তাবিজ দেয়। এরপর বিকেল ৫টার দিকে আদুরী খাতুন কবিরাজের দেওয়া ফিটকারী পানি নিজে খান এবং শিশুটিকে খাওয়ায়। এরপর শিশুটি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তখন শিশুটি মারা গেছে ভেবে আদুরী খাতুন তার মায়ের বাড়ির টয়লেটের ট্যাংকির ঢাকনা খুলে শিশুটিকে সেখানে ফেলে দেয়। এরপর শিশুকে জিনে নিয়ে গেছে বলে নাটক সাজায় আদুরী। পরে স্থানীয় লোকজক অনেক খোঁজাখুঁজির পর ১৮ জুলাই বিকেলে ট্যাংকি থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা অসীম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে ধুনট থানায় মামলা দায়ের করেন। এদিকে মামলা দায়েরের পর পুলিশ তদন্ত শেষে শনিবার শিশুটির মা আদুরীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সন্তান হত্যার দায় স্বীকার করে নেয়। এরপর এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা এবং ভুয়া চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতারণা করার অপরাধে কবিরাজ কেছেম উদ্দিনকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা জানান, নিজের শিশুসন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করে শিশুটির মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় শিশুটির মা ও কবিরাজকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।