নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রশাসনের সাথে গোপন আঁতাত করে রয়েল রানা প্রতারক একরামূল এখনো নির্বিঘেœ তাদের প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একসময় ছিলেন এমএলএম প্রতারণা কোম্পানী ডেসটিনির দালাল। তার গুরু ছিলেন চরমোনাইর পীরের ছেলের গুণধর পুত্র রেদোয়ান বিন ইসহাক। ব্যবসাটা লাভজনক হওয়ায় পরে চরমোনাইর পীরের ছেলের সাথে পরামর্শ করে ডেসটিনি থেকে বেরিয়ে এসে নিজেরাই এইমওয়ে নাম দিয়ে এমএলএম প্রতারণা কোম্পানী খোলে বসে। ছয় মাসে টাকা দ্বিগুন করার লোভ দেখিয়ে অল্প সময়েই প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। গ্রাহকরা আসল টাকাও ফেরত না পেয়ে থানায় মামলা করলে পীরের পুত্র ইসহাক ও এমডি মাসুদ রানা (বর্তমানে আমেরিকায় পলাতক) গ্রেফতার হলে রয়েল রানা ও তার সহযোগী একরামুল হক ভুয়া আত্মগোপনে চলে যায়। কয়েক বছর পালিয়ে থাকার পর ঢাকায় এসে মুগদা এলাকায় ৬০০ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা এসপিসি ওয়ার্ল্ডের আল আমিনের মতই ‘এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড’ নাম দিয়ে এইমওয়ের কায়দায় এমএলএম প্রতারণার ব্যবসা করে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এগ্রো ফুড এন্ড কসমেটিক্স-তার আসল ব্যবসা নয়, এমএলএম এবং দ্বিগুন মুনাফা দেবার কথা বলে প্রতারণা করাই তার মূল ব্যবসা।
বহুরূপী প্রতারক একরামুল হক ভূঞা
বহুরূপী প্রতারক একরামুল হক ভূঞার বাড়ি ফেনী জেলায়। ফেনীর একটি সিনেমা হলের মেশিন অপারেটর ছিলেন। পরে ঢাকায় এসে সিনেমার ফিল্ম প্রিন্ট ব্যবসায় যুক্ত হয়। ছায়াছবির প্রিন্টের ফিল্মের বস্তা মাথায় করে নিয়ে যেতেন বিভিন্ন সিনেমা হলে। বিভিন্ন চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংন্থার প্রতিনিধি হিসেবে দালালী করতেন। একসময় শুরু করেন অশ্লীল ছবির ব্যবসা। বিভিন্ন প্রযোজকের কাছ থেকে অল্প টাকায় পুরনো ছবি কিনে নিয়ে তাতে অশ্লীল কাটপিস যুক্ত করে বিভিন্ন সিনেমা প্রদর্শণ করে কিছু টাকা জমা হবার পর শুরু করেন সুদের ব্যবসা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অশ্লীল ছবি নির্মাতাদের যে তালিকা করেছিল তাতে একরামুল হক ভূঞার নাম যুক্ত হলে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তখন সুদের ব্যবসায় বেশি মনযোগ দেন। চলচ্চিত্র প্রযোজকদেরকে মোটা অংকের সুদে টাকা বিনিয়োগ করতেন। পাশাপাশি নারী সরবরাহের ব্যবসা শুরু বরেন। এসময় প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফেনীর ছাগলনাইয়ায় আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে ২০১০ সালে আবার ঢাকায় এসে এমএলএম প্রতারণার ব্যবসায় যুক্ত হয়। এইমওয়ে নামক প্রতারণা কোম্পানীর এজেন্ট হয়ে ৬ মাসে টাকা দ্বিগুন করার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রযোজক শরীফ উদ্দিন খান দিপুর কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা, দুলাল সিনেমা হলের মালিক দুলালের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা, পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা, এবং সাংবাদিক কাদের মনসুর ও সুমন পারভেজের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা, ফিল্মেও অফিস ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম বাবুর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে পলাতক একরামুল হক ভূঞা। কয়েক বছর পালিয়ে থাকার পর ঢাকায় এসে প্রতারক রয়েল রানার সাথে মিলে মুগদা এলাকায় ‘এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড’ নাম দিয়ে এইমওয়ের কায়দায় এমএলএম প্রতারণার ব্যবসা করে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণা ব্যবসার পাশাপাশি নারী ব্যবসাও শুরু করেছে পুরোদমে। নারীদেহ ব্যবসার সুবিধার্থে বসুন্দরা আবাসিক এলাকায় একটি আলীশান ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে এবং কেরাণীগঞ্জে একটি আলীশান রেস্ট হাউজ তৈরি করে ব্যবসা শুরু করেছে।

কে এই রয়েল রানা
আনোয়ার এইচ রয়েল রানা। বাড়ি ফেনী জেলায়। একসময় ছিলেন এমএলএম প্রতারণা কোম্পানী ডেসটিনির দালাল। তার গুরু ছিলেন চরমোনাইর পীরের ছেলের গুণধর পুত্র রেদোয়ান বিন ইসহাক। ব্যবসাটা লাভজনক হওয়ায় পরে চরমোনাইর পীরের ছেলের সাথে পরামর্শ করে ডেসটিনি থেকে বেরিয়ে এসে নিজেরাই এইমওয়ে নাম দিয়ে এমএলএম প্রতারণা কোম্পানী খোলে বসে। ছয় মাসে টাকা দ্বিগুন করার লোভ দেখিয়ে অল্প সময়েই প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। গ্রাহকরা আসল টাকাও ফেরত না পেয়ে থানায় মামলা করলে পীরের পুত্র ইসহাক ও এমডি মাসুদ রানা (বর্তমানে আমেরিকায় পলাতক) গ্রেফতার হলে রয়েল রানা ও তার সহযোগী একরামুল হক ভুয়া আত্মগোপনে চলে যায়। কয়েক বছর পালিয়ে থাকার পর ঢাকায় এসে মুগদা এলাকায় ৬০০ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা এসপিসি ওয়ার্ল্ডের আল আমিনের মতই ‘এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড’ নাম দিয়ে এইমওয়ের কায়দায় এমএলএম প্রতারণার ব্যবসা করে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এগ্রো ফুড এন্ড কসমেটিক্স-তার আসল ব্যবসা নয়, এমএলএম এবং দ্বিগুন মুনাফা দেবার কথা বলে প্রতারণা করাই তার মূল ব্যবসা।
এইমওয়ে প্রতারণা মামলার অন্যতম আসামী রয়েল রানা ও প্রতারক একরামুল করিম ভুইয়া প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে আবারো ৬ মাসে টাকা দ্বিগুন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার ব্যবসা করে কয়েকশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজধানীর ৮৪ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ক-১১/২ জগন্নাথপুর বিল্ডিংয়ের ৯ম তলায় এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড এগ্রো ফুড এন্ড কসমেটিক্স-এর হেড অফিস। এছাড়া রাজধানীর মুগদাপাড়া, চট্টগ্রাম সিলেটসহ বিাভন্ন এলাকায় শাখা অফিস রয়েছে। ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী তাদের উৎপাদিত পণ্যের সংখ্যা ৮৫টি। এক নম্বরে রয়েছে যৌনশক্তি বর্ধক পাওয়ার সোর্স কিং, মুল্য – ১০০০ টাকা, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন নেই। এছাড়া আছে প্রোটিন প্লাস বেনিফিট, ম্লিম টি, তুলসি টি, শ্যাম্পু, ফিমেল কেয়ার প্লাস, প্রোটিন প্লাস, হেয়ার অয়েল ও তুলসি জুস ইত্যাদি। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কিংবা বিএসটিআই- কোন সংস্থারই অনুমোদন নেই। এসব পণ্যের ড্রাগ লাইসেন্স বিষয়ে জানতে চাইলে রানা বলেন তার কোস্পানী জয়েন্ট স্টক কোম্পানী থেকে রেজিষ্ট্রিকৃত। তিনি এমএলএম ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেছেন। ওষুধ আইনে এমএলএম ও হকারি করে ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড এমএলএম সিস্টেমে ওষুধ বিক্রির নামে প্রতারণা করছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে- রানার নিজস্ব কোন কারখানা নেই, তিনি বিভিন্ন ভেজাল ইউনানী ওষুধ প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে ভেজাল ওষুধ তৈরি করে এনে তাতে ‘এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড’ স্টিকার লাগিয়ে দিয়ে প্রতারণা করছে। রানা ইতিমধেই তার আখের গুছিয়ে নিয়েছে। গ্রাহকদের দ্বিগুন টাকা ফেরত দেবার সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। কাজেই যেকোন সময় বিদেশে পালিয়ে যেতে পারে রানা ও একরাম।
একই কায়দায় ‘এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড’
এইমওয়ের মামলার আসামী হয়ে দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর তিন বছর আগে রানা ও একরাম ঢাকায় এসে মুগদা এলাকায় ‘এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড’ নাম দিয়ে এইমওয়ের কায়দায় এমএলএম কোম্পানী খোলে প্রতারণার ব্যবসায়
লিপ্ত হয়ে এখন শত কোটি টাকার মালিক। এইমওয়ের কায়দায় তৈরি করেছেন ‘এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড’ গ্রুপ। এই গ্রুপে রয়েছে অসংখ্য নাম সর্বস্ব কোস্পানী। এগুলোর মধ্যে এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড ফুড এ- কসমেটিক্স, ‘এক্সিলেন্ট ফার্মাসিটিক্যাল এ- ইউনানী ল্যাবরেটরী, এক্সিলেন্ট টিভি, এক্সিলেন্ট টাচ ক্রিয়েশন (মিডিয়া হাউজের সাইনবোর্ডে গোপন প্রমোদকেন্দ্র), ইআরটিসি- এক্সিলেন্ট রিসার্চ এ- ট্রেনিং সেন্টার, উইন-উইন (সার্ভিস প্রোভাইডার), পিআর হোল্ডিং এ- ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিঃ, ম্যান ফর ম্যান ফাউ-েশন, রয়েল এইড স্কুল এ- কলেজ ইত্যাদি। তাছাড়া কেরানীগঞ্জ এলাকায় বানিয়েছে একটি আলীশান রেস্টহাউস, সেই রেস্ট চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। রানা ও একরামের অপকর্মের ফিরিস্তি এক সংখ্যায় লিখে শেষ করা সম্ভব নয়।